বনি

অল্প গল্প: সম্প্রতি বেশ চর্চায় রয়েছে পেগাসাস। কী এই পেগাসাস? সত্যিই কি পেগাসাস সফটওয়্যারের মাধ্যমে আপনার-আমার ফোন হ্যাক হয়ে যাচ্ছে? তবে কি অজান্তেই আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর নজর রাখছে অন্য কেউ? সোশ্যাল মিডিয়ার নাগাড়ে ব্যবহার কি আমাদের ক্রমশই অজানা কোনও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? আধুনিক সমাজ সম্পর্কে সামান্য ওয়াকিবহাল হলে এই প্রশ্নগুলি আপনার মনে কখনও না কখনও আসতে বাধ্য। উন্নত মানের টেকনোলজির উপর নির্ভরশীল এই সমাজ আর কয়েকটা বছর পর ঠিক কেমন হতে পারে? ঠিক যেন সেটাই তুলে ধরেছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছবিটি। কলাকুশলী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের 'বনি' শীর্ষক একটি গল্প অবলম্বনে তৈরি এই ছবিতে অভিনয় করেছেন খোদ পরিচালক নিজেই। পরমব্রতের বিপরীতে রয়েছেন কোয়েল মল্লিক। রয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক, পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনয় করেছেন অঞ্জন দত্ত। চিত্রনাট্যে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গ দিয়েছেন অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত। সিনেম্যাটোগ্রাফি সুমিত চৌধুরীর। ছবির মিউজিক ডিরেক্টর অনুপম রয়। গান গেয়েছেন অনুপম রায় এবং পালোমা মজুমদার। প্রযোজনায় সুরিন্দর ফিল্মস। কেমন হল? স্টার ওয়ার্স, স্ট্রেঞ্জার থিংস কিংবা ব্ল্যাক মিরর দেখা বাঙালিরা কলকাতায় তৈরি স্কাই-ফাই ছবি শুনে কিছুটা হয়ত নাক সিঁটকোতেই পারেন। তবে এই ছবিটির অধিকাংশ দৃশ্যই ইতালিতে শ্যুট করা হয়েছে। কর্মসূত্রে মিলানে থাকে মুখোপাধ্যায় দম্পতি। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় (পরমব্রত) পেশায় ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর স্ত্রী প্রতিভা (কোয়েল) পেশায় বায়ো সায়েনটিস্ট। বরাবরই পড়াশোনায় ব্রিলিয়ান্ট এই দু'জন বছর দশেক ধরেই বিদেশের মাটিতে কর্মরত। আধুনিক ঝাঁ চকচকে শহরে অত্যাধুনিক লাইফস্টাইলের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়েও তাঁরা যে দুই দেশের মধ্যে বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের ঘুঁটি হয়ে উঠতে পারেন, তা স্বপ্নেও হয়ত ভাবেনি। সন্তানসম্ভবা প্রতিভার কাছে জীবনে আসতে চলা নতুন অতিথিকে নিয়ে নানা পরিকল্পনাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই তো মদ খেয়ে স্বামীকে গাড়ি চালাতে বারণ করে সে। বলে, 'এবার একটু বড় হতে হবে। আমার দায়িত্ব আমি পালন করছি। তোমাকেও তোমার দায়িত্ব পালন করতে হবে।' ঘরের নতুন সদস্যকে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় থাকা এই দম্পতি নিজেদের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে এক অন্য দুনিয়ায়। যেখানে ভবিষ্যতে এক দেশ অন্য দেশকে ধ্বংস করার লক্ষ্য নিয়ে অত্যাধুনিক বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ারের জন্য নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেই গবেষণার ঘুঁটি হয়ে ওঠে সব্যসাচী ও প্রতিভা। লেক কোমোতে বেড়াতে যাওয়ার পথে পথ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সন্তানসম্ভবনা প্রতিভা এবং তাঁর স্বামী সব্যসাচী। ব্যস, তারপর থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তাঁদের। প্রসবের তিনমাস আগেও প্রতিভা ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে ফিট তকমা দিয়েছিলেন চিকিৎসক। অথচ সেই সন্তান পৃথিবীতে আসতেই প্রতিভা ও সব্যসাচীর চোখের সামনে নেমে আসে অন্ধকার। তাঁদের আদরের বনি আর পাঁচটা শিশুর মতো স্বাভাবিক নয়। বনি কথা বলে না, নড়াচড়া করে না এমনকী, তার চোখের পাতাও পড়ে না। যদিও তার হৃদস্পন্দন রয়েছে। এমত শিশুকে নিয়ে হতবাক মা-বাবা। ছবিটি স্কাই-ফাই হলেও আদতে এক বাবা-মায়ের তাঁদের সন্তানকে বাঁচানোর লড়াই। যে মা 'বায়োলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার'-এর মতো কঠিন শব্দ বোঝে না। সে শুধু জানে সন্তানকে সুস্থ করে তোলাটাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। ছেলেকে বাঁচাতে পৃথিবীর সমস্ত অশুভ শক্তির সঙ্গে লড়াই করতেও প্রস্তুত সে। ধীরে ধীরে প্রতিভা ও সব্যসাচী জানতে পারে বনি একটি সুপার হিউম্যানয়েড। কী ভাবে জিন ম্যাপিংয়ের সাহায্যে গোটা বিশ্বের মধ্যে প্রতিভা ও সব্যসাচীর মতো দম্পতিকে বেছে নেওয়া হয় এই ধরণের সুপার হিউম্যানয়েড সন্তান তৈরির জন্য। ভবিষ্যতে তাদের বনিকে দুই দেশের মধ্যে আধুনিক লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু, মায়ের মন তা মেনে নিতে চায় না। যে কোনও মূল্যে বনিকে বাঁচাতে প্রস্তুত প্রতিভা। কখনও বাড়িতেই গুন্ডাদের হাত থেকে তো কখনও রাস্তায়-গাড়িতে বন্দুকের নলের সামনে। এর মধ্যেই বনিকে ইতালির কিছু বাসিন্দা ভগবানের দূত মনে করতে শুরু করে। প্রতিভা ও সব্যসাচীর আলাপ হয় বৈজ্ঞানিক শওকত ওসমানের (অঞ্জন দত্ত) সঙ্গে। তার সাহায্যেই বনিকে বাঁচানোর সূক্ষ্ম আশা তৈরি হয় এই দম্পতির। তারা ফিরে আসে কলকাতায়। আধুনিক যুগে কী ভাবে একটি কানেকশনের মাধ্যমে ইতালি থেকে কলকাতা জুড়ে গিয়েছে, তাও বুঝতে পারে তারা। যেখানে কোনও কিছুর মধ্যে জড়িত না থেকেও কাঞ্চন মল্লিক অভিনীত এক ছাপসা মধ্যবিত্ত কেরানির বাড়িতে ঘটে চলেছে নানা অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড। অবশেষে সব্যসাচী ও প্রতিভা হদিশ পায় বনিকে সুপার হিউম্যানয়েড তৈরি করা সেই বিজ্ঞানীর। শুরু হয় বনিকে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা। মায়ের অদম্য জেদের কাছে বিজ্ঞানের সৃষ্টিও হার মানতে পারে। কল্পবিজ্ঞান নির্ভর এই ছবিতে সেই আবেগটাকেই তুলে ধরেছেন পরিচালক। পরমব্রতর পরিচালনা দর্শককে ছবি শেষ হওয়ার পর বাহবা দিতে বাধ্য করবেই। প্রশংসনীয় তাঁর অভিনয়ও। মায়ের ভূমিকায় যথাযথ আবেগ ফুটিয়ে তুলেছেন কোয়েল। ছোট হলেও দৃঢ় অভিনয় করেছেন অঞ্জন দত্ত। ছোট রোলে কাঞ্চন মল্লিকও তাঁর চরিত্রে যথাযথ। বিশেষ নজর কাড়বে সিনেম্যাটোগ্রাফি। ক্লোজ শট এবং জাম্প কাটের ব্যবহার প্রশংসনীয়। অনুপম রায়ের সুরে এবং পালোমা মজুমদারের কণ্ঠে ছবির গান যথাযথ। সব মিলিয়ে কল্পবিজ্ঞানের মোড়কে সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের আবেগ নিয়ে তৈরি এই ছবি এবারের পুজো প্ল্যানিংয়ে তালিকায় রাখলে মন্দ হবে না।


from Movie Review in Bengali, চলচ্চিত্র পরিদর্শন, Bangla Movie Review, Bollywood Film Rating https://ift.tt/3oTPDAT
বনি বনি Reviewed by SGMoviesHD on October 10, 2021 Rating: 5

No comments:

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.