গোলন্দাজ

অল্প গল্প: 'খেলার মাঠ মানুষকে বাঁধে, ভাঙে না...’, বাইশ গজের মাঠে বিপ্লব এনেছিলেন নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী। ইতিহাসের পাতায় তিনি পরিচিত 'ফাদার অফ ইন্ডিয়ান ফুটবল' হিসেবে। সময়টা ১৮৭৭ সাল। হেয়ার স্কুলের সতীর্থদের সঙ্গে ফুটবলের পরিচয় করিয়েছিলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ। তাঁর উদ্যম মনে ধরেছিল স্কুলের তৎকালীন ইউরোপীয় শিক্ষকদের একাংশের। তাই নগেন্দ্রপ্রসাদ ও তাঁর বন্ধুদের কাঁধেই আশেপাশের স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের ফুটবলে হাতেখড়ি দেওয়ার ভার সপে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন সমাজে ফুটবল ‘ব্রিটিশ গেম’ হিসেবেই পরিচিত ছিল। কিন্তু, ভারতীয়রাও যে বলে বলে গোল দিতে পারে, সে কথা ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে বুঝিয়েছিলেন নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী। তাঁর জীবনকাহিনীর আধারেই তৈরি SVF-এর গোলন্দাজ। ছবিতে নগেন্দ্র প্রসাদের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে দেবকে। তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ শোভাবাজার রাজবাড়ির আনন্দ কৃষ্ণ দেবের কন্যা কৃষ্ণকমলিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইশা সাহা। ভার্গবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এছাড়াও ছবিতে রয়েছেন শ্রীকান্ত আচার্য, তুলিকা বসু, ইন্দ্রাশিস রায়, জন ভট্টাচার্য, অ্যালেক্স ও নেল প্রমুখ। কেমন হল? রক্ত না ঝরলে স্বাধীনতা আসে না ঠিকই। কিন্তু 'সম্মুখসমরে' কতটা জোর, এক শতক আগে সমাজকে তা বুঝিয়েছিলেন নগেন্দ্র প্রসাদ। এক শতক পরে তাঁর জুতোয় পা গলিয়ে ফুটবলে 'কিক' করে আবারও সেই ইতিহাস ফিরিয়ে আনলেন দেব। বিগত কয়েক বছরে নিজেকে বারবার ভেঙেছেন অভিনেতা। ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করার চেষ্টা করেছেন। তবে নিঃসন্দেহে তাঁর কেরিয়ারের মাইল ফলক। দুরন্ত কায়দায় চরিত্রের খুঁটিনাটি দিকগুলোকে ফুটিয়ে তুলেছেন। খেলার মাঠে তিনি যেমন শক্ত, তেমনই বিচক্ষণ। আবার একটি ছাগলছানা কাঁটার জালে আটকে গেলে তিনি মানবিক। বন্ধুমহলে তিনি দরাজ। আবার পালকির ফাঁকে কৃষ্ণকমলিনীকে দেখে তিনি মুগ্ধ। আবার দেশমাতৃকার অপমানে তিনি ক্ষিপ্র। বলিষ্ঠ চরিত্রের সবক'টি আঙ্গিক সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দেব। গোলন্দাজ ছবিটি পরিচালনা, চিত্রনাট্য এবং সিনেম্যাটোগ্রাফি সবদিক থেকেই অনেকটা এগিয়ে। হলে বসে থাকা দর্শকের শিরায় শিরায় দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। মুন্সিয়ানায় মনজয় করেছেন চিত্রগ্রাহক সৌমিক হালদার। ছবির প্রতিটি চরিত্রই দুরন্ত অভিনয় করেছেন। বিশেষত ফুটবল দলের সদস্যরা। খুদে নগেন্দ্র প্রসাদের অভিনয়ও বেশ ভালো। ইশা সাহার অভিনয়ও নজর কেড়েছে। তবে অনির্বাণ যেন নিজের ছাঁচ ভেঙে বেরতে পারলেন না। তবে ইন্দ্রাশিস আবারও বলিষ্ঠ পারফর্ম্যান্সের মাধ্যমে কয়েক কদম এগিয়ে এলেন। ছবিতে গায়ক শ্রীকান্ত আচার্যকে দেখা গিয়েছে নগেন্দ্র প্রসাদের বাবার চরিত্রে। গড়ের মাঠে সাহেবদের ফুটবল খেলা দেখেই নগেন্দ্র প্রসাদের যাত্রা শুরু। হেয়ার স্কুলে শিক্ষকের কাছে বেত্রাঘাত খেয়েও তিনি থামেননি। ইংরেজদের নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছেন চোখে চোখ রেখে। ইটস আওয়ার গেম বলে আস্ফালন করা ব্রিটিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে বলেছেন ইটস আওয়ার কান্ট্রি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে একটা গোল যে দেশকে জাগিয়ে তুলতে পারে তা দেখানো হয়েছে গল্পে। ব্রিটিশদের উপেক্ষা আর তাচ্ছিল্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কী ভাবে 'ভারতীয় ফুটবলের প্রাণপুরুষ' বয়েজ, ফ্রেন্ডসের মতো ফুটবল ক্লাব গড়লেন তা ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে দেখতে বেশ ভালোই লাগবে। তৎকালীন ‘সুশীল সমাজ’ এর ভ্রুকুটি পেরিয়ে ইংরেজদের ছাউনির পাশে ওয়েলিংটন ক্লাব খোলার ইতিহাসও দেখানো হয়েছে ছবিতে। নগেন্দ্র প্রসাদের জীবনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখিয়েছেন পরিচালক। প্রতিবাদী সর্বাধিকারী পরিবারের ছেলে নগেন্দ্র কিন্তু সে সময়েই জাতপাতের ভেদাভেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। খেলার মাঠে জাতি ধর্মের বৈষম্য কখনওই আসতে পারে না, সাধের ওয়েলিংটন ক্লাব ভেঙে দিয়ে সে কথা সমাজকে বুঝিয়েছিলেন নগেন্দ্র প্রসাদ। পরে তিনি গড়েছিলেন বিখ্যাত শোভাবাজার ক্লাব। যার প্রথম সদস্য ছিলেন মণি দাস। 'মরে যাব, কিন্তু হেরে ফিরব না’, এই ডায়ালগের মধ্যে দিয়েই বাংলা ও বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছেন দেব। ছবির ক্লাইম্যাক্স দুরন্ত। তবে কিছু জায়গায় 'স্লো পেস'-এ চলেছে ছবি। আচমকা গানের ব্যবহারে তাল কেটেছে কয়েকটি জায়গায়। কিন্তু, বিক্রম ঘোষের সংগীত সত্যিই উপরি পাওনা। দেবের গোঁফে তা দেওয়ার দৃশ্য, নায়কোচিত দৌড় ভক্তদের ভালো লাগবে। এবারের পুজোয় নিজের মাস্ট ওয়াচের তালিকায় গোলন্দাজকে রাখতেই পারেন। ঠকবেন না।


from Movie Review in Bengali, চলচ্চিত্র পরিদর্শন, Bangla Movie Review, Bollywood Film Rating https://ift.tt/3oNEOAe
গোলন্দাজ গোলন্দাজ Reviewed by SGMoviesHD on October 10, 2021 Rating: 5

No comments:

Theme images by merrymoonmary. Powered by Blogger.