ইউটিউব থেকে আয়
বেশিরভাগ মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মজার খোঁড়াক হিসেবে। কেউ ব্যবহার করে নিজের বিভিন্ন ক্রিয়েটিভিটি প্রদর্শন করে রাতারাতি খ্যাতি পাওয়ার জন্য আবার কেউ এটি ব্যবহার করে নিজের এবং বন্ধুবান্ধবদের একান্ত কিছু স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সারাজীবন। কিংবা কেউ হয়তো বিদেশে থাকা প্রিয়জনের কাছে নিজেদের বিশেষ আয়োজন বা মুহূর্ত পৌঁছে দেয় ইউটিউব এ আপলোড করা একটি ভিডিও এর মাধ্যমে।
কিন্তু যেসকল মানুষ প্রতিনিয়ত ইউটিউব ব্যাবহার করে শুধু শখের বসে তারা জানেই না যে আপনার আপলোড করা এই ভিডিও গুলো অনায়াসে হতে পারে আপনার আয়ের উৎস। খুব সহজ সাধারন কিছু নিয়ম অনুসরন করে অনলাইনের আয়ের যেকোনো ক্ষেত্র থেকে অনেক দ্রুত আয় করা যায় ইউটিউব থেকে। শুধু জানতে হয় আয়ের সঠিক পথ। তো চলুন দেখে নেই কি কি ভাবে আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন –
ইউটিউব থেকে আয় করুন অ্যাডসেন্স দিয়ে
এটাই ইউটিউব থেকে আয় করার সবথেকে জনপ্রিয় এবং বড় মাধ্যম। আমরা সকলেই জানি যে ইউটিউব হচ্ছে গুগল এর একটি সেবা। আবার গুগল অ্যাডসেন্স ও গুগলের। তাই ইউটিউব এর ব্যাপারে গুগলের প্রাধান্য অনেক। এমনকি আপনি মাত্র কয়েকটা ছোট ছোট ভিডিও দিয়েই একটি অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট এপ্রুভ করাতে পারবেন। আর সবথেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে অ্যাডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার জন্য ইউটিউব হচ্ছে অন্যতম সহজ একটি পদ্ধতি। সেরা আর্নাররা শুধুমাত্র ইউটিউব অ্যাডসেন্স ব্যাবহার করে মাসে কয়েক লক্ষ ডলার পর্যন্ত আয় করে থেকে!

নিজের পণ্য বিক্রি করে
ধরুন আপনার নিজের একটা ফ্যাশন হাউজ আছে। এখন আপনি যদি নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডজ সম্পর্কে কিছু ভিডিও তৈরি করেন এবং সাথে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে কিছুটা রিভিও যুক্ত করে আপলোড করেন তবে ইউটিউব হতে পারে আপনার নিজের পণ্য মার্কেটিং এর সবথেকে বড় মাধ্যম। এখন আপনি বলতে পারেন যে এভাবে কত জনই বা কিনতে পারে।

কিন্তু আপনি জানেন কি ইউটিউব এ আপনি কি পরিমান ভিসিটর পেতে পারেন? যেকোনো বিষয়ের উপর ভিডিও গুলোর ভিউ থেকে আপনি সহজেই তা বুজতে পারবেন। আর সবথেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে ওয়েব সার্চ এর তাবৎ ক্রয়যোগ্য (অর্থাৎ যে কীওয়ার্ড গুলো দিয়ে মানুষ কোন প্রোডাক্ট কিনার জন্যই সার্চ করে) সার্চের বেশিরভাগটাই ইউটিউবে হয়। মানে কেউ কোন পণ্য কিনার জন্য মন স্থির করলে সেই পণ্য সম্পর্কে জানতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউটিউব ভিডিওই দেখে থাকে।
এফিলিয়েট প্রোডাক্ট এর রিভিউ করে
এটি ইউটিউব ব্যাবহারের আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এই ক্ষেত্রে মানুষ আমাজন বা অন্য কোন এফিলিয়েট নেটওয়ার্ক এর পণ্যের এফিলিয়েশন করে থাকে। সাধারনত নিজের এফিলিয়েট লিঙ্ক ভিডিও এর ডেসক্রিপশনে দিয়ে দেওয়া হয় এবং ভিডিও তে সেই প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিভিও প্রদান করা হয়।

সেই ভিডিও থাকাকালীন কেউ যদি ঐ লিঙ্কের মাধ্যমে গিয়ে কোন পণ্য ক্রয় করে থাকে তবে এফিলিয়েটর কমিশন পায়। এইভাবে এফিলিয়েশন করলে খুবই কম খরচে বা বিনা খরচে আপনি সহজেই মাস গেলে অনেক টাকা কামিয়ে নিতে পারবেন
উত্তর : খুব সহজ, একটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী করুন। নিজের সঠিক নাম, বয়স এবং ফোন নম্বর দিয়ে। এই অ্যাকাউন্ট দিয়ে ইউটিউবে লগ ইন করুন। সেখানে ‘Create Channel’ পাবেন। তার মাধ্যমে নিজের চ্যানেল তৈরী করুন। একটা ভালো প্রোফাইল পিকচার এবং কভার ফটো অ্যাড করুন। এবং আপনার নিজের ক্যামেরায় তৈরী যে কোনো ফুটেজ আপলোড করুন। ব্যস, আপনার ৫০ শতাংশ কাজ রেডি।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : আমি ভিডিও আপলোড করেছি কিন্তু টাকা আসছে না।
উত্তর : টাকা উপার্জন করতে হলে আপনাকে আপনার ভিডিওটি ‘Monetized’ করতে হবে। ইউটিউবের Video Manager-এ ক্লিক করুন, বা-দিকে একটা লিস্ট আসবে সেখানে Channel-e ক্লিক করুন, সেখানে আপনি Monetization পাবেন। এখান থেকে আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টটি অ্যাকটিভ করতে হবে। (অ্যাকটিভ করার উপায়টি লিখে সঠিক বোঝানো সম্ভব নয়, নিজে থেকে চেষ্টা করুন এবং স্টেপগুলি ফলো করুন)।
তৃতীয় প্রশ্ন : আমি কি যেকোনো ভিডিও আপলোড করতে পারি?
উত্তর : আপনি আপলোড করতে পারবেন সব ভিডিও কিন্তু সব ভিডিও থেকে পয়সা উপার্জন করতে পারবেন না। আপনি অন্য কোনো সিনেমা বা টিভির থেকে নেওয়া ভিডিও বা অডিও , এমনকি আপনার ভিডিওর মধ্যেও যদি অন্য কারো ভিডিও বা অডিও থাকে তাহলে সেটাও মনেটাইজ হবে না, ইচ্ছে করলে ইউটিউব আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দিতে পারে এবং আর আপনি কখনই আপনার নিজের নামে ভবিষ্যতে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।
চতুর্থ প্রশ্ন : পাড়ার ফাংশানে একজন গায়ক গান গেয়েছে আমি তার ভিডিও নিয়েছি, সেটা কি আমি আপলোড করতে পারি?
উত্তর : এক্ষেত্রে ভিডিওটি আপনার নিজের কিন্তু যেহেতু অডিওটি অন্য কারো তাই আপনি সেটি থেকে উপার্জন করতে পারবেন না। জেনে রাখুন, অন্য কারো গান আপনি নিজে গেয়েছেন সেটাও কিন্তু ইউটিউব গ্রহণ করবে না।
ষষ্ঠ প্রশ্ন : কত টাকা উপার্জন সম্ভব?
উত্তর : এরও কোনো সঠিক উত্তর নেই। ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের মূল উৎস হচ্ছে ভিউ। যে ভিডিও যত বেশী ভিউ হবে সে ভিডিও তত বেশী অর্থ উপার্জন করবে। তবে মোটামুটি ভাবে প্রতি হাজার মনেটাইজ ভিউতে ১ থেকে ৫ ডলার অবধি আয় সম্ভব।
উত্তর : ধরা যাক আপনার ভিডিওটে যে অ্যাড আসে, সেটা ১ মিনিট-এর মাথায়। এবার আপনার ভিডিওটি ৫০০০ ভিউ হয়েছে কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার জন হয়ত আপনার ভিডিও ১ মিনিটের কম দেখেছে। তাহলে ৫ হাজার ভিউ স্বত্তেও আপনার মনেটাইজ ভিউ হবে মাত্র ২ হাজার। মনেটাইজ ভিউ কত হয়েছে সেটা একমাত্র যার অ্যাকাউন্ট সেই দেখতে পারবে ‘Analytics’-এ ক্লিক করে।
অষ্টম প্রশ্ন : কবে থেকে টাকা আয় সম্ভব?
উত্তর : আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাপ্লিকেশান অ্যাপ্রুভড হতে দুই থেকে তিন দিন লাগে। একবার অ্যাপ্রুভড হয়ে গেলেই আপনার আয় শুরু।
নবম প্রশ্ন : টাকা কবে থেকে পাব?
উত্তর : আপনার ইনকাম লেভেল যতদিন না ১০০ ডলার হচ্ছে ততদিন আপনি টাকা পাবেন না। ১০০ ডলার হলে আপনার বাড়িতে গুগল থেকে একটি চিঠি আসবে তাতে একটি কোড নম্বর থাকবে সেই কোড নম্বর দিয়ে আপনাকে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস দিতে হবে অর্থাৎ ব্যাঙ্ক নেম, অ্যাকাউন্ট হোল্ডার নেম, সুইফট কোড ইত্যাদি। আপনার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট-এ আপনার নাম এবং ঠিকানা আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টের নামের সাথে মিল থাকতে হবে, নইলে এই টাকা আপনি পাবেন না। তাই অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যেই নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে এবং সেখানে যে অ্যাড্রেস দেওয়া আছে সেটাই ব্যবহার করবেন।
উত্তর : ইউটিউব মূলত একটা মাধ্যম যেখানে মানুষ নিজেদের ভিডিও শেয়ার করে। এই সাইটের প্রাথমিক লক্ষ টাকা উপার্জন নয়। তাই টাকা উপার্জন করব ভেবে যদি আপনি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন তাহলে আপনি নিরাশ হবেন। ইউটিউব থেকে টাকা পেতে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। হতে পারে আপনার প্রথম টাকা পেতে পেতে এক বছর বা তার-ও বেশি লেগে গেল কিন্তু একবার টাকা আসা শুরু করলে এবং আপনার ভিডিও প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার ভিউ দিতে পারলে বিশ্বাস করুন আপনাকে আর কোনো চাকরী করতে হবে না।
শেষ প্রশ্ন : সকলেই কি টাকা আয় করতে পারে?
উত্তর : আঠারো বছরের যে কেউ তার নিজের মৌলিক ভিডিও দিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারে। কিন্তু কার ভিডিও কত জনপ্রিয় হবে সেটা নির্ভর করছে কিছুটা আপনার দক্ষতা এবং আপনার ভাগ্যের উপর। প্রচুর মানুষ যারা নিজের পোষা বিড়ালের ছবি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা আয় করছে আবার অনেকে আছে যারা পয়সা খরচ করে নিজেরা নানা রকম ভিডিও বানিয়েও এক ডলার আয় করতে পারছে না। তাই সঠিক ভাবে যদি আপনি আপনার ইউটিউব অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করতে পারেন তাহলে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা অসম্ভব নয়।
ইউটিউব এর পার্টনার হোন
বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি ইউটিউব পার্টনার আছেন। পার্টনাররা ভাড়ার ভিত্তিতে ভিডিও অভারলেয় করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে এবং আয় ইউটিউব এর সাথে ভাগাভাগি করে নেয়।

তাদের অনেক সময় ব্রান্ডদের এন্টারটেইনার বা ভিডিও মার্কেটার হিসেবে হায়ার করাও হয়ে থাকে। অনেক সময় একটা ব্রান্ডের জন্য বিশেষ ভিডিও তৈরি করেও এরা অনেক টাকা উপার্জন করে।
আপনার ভিডিওর ডেসক্রিপশনে লিঙ্ক বিক্রি করুন
এটা অনেক মজার একটা আয়। ধরুন যেকোনো বিষয়ের উপর আপনার একটা ভিডিও ইউটিউব এ প্রথম দিকে আছে। এই মুহূর্তে এই ধরনের প্রোডাক্ট যাদের আছে আপনি চাইলেই তাদের কাছে এককালীন অথবা দীর্ঘমেয়াদী শর্তে একটা লিঙ্ক বিক্রি করতে পারেন যা আপনার ভিডিও এর ডেসক্রিপশনে থাকবে। কয়েকটা ভিডিও তে এসইও করেই আপনি এইভাবে লিঙ্ক বিক্রি শুরু করতে পারেন।

তবে এই ক্ষেত্রে ভিডিও তে অবশ্যই ভালো মানের ভিসিটর থাকতে হবে আর এভাবে লিঙ্ক দিয়ে আপনি আপনার নিজের ওয়েবসাইট বা ওয়েব ব্লগেও প্রচুর পরিমান ট্রাফিক আনতে পারেন।
এই ধরনের আরও বেশ কিছু উপায় আছে ইউটিউব থেকে আয় করার। তবে সবথেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে কাজ করার মানসিকতা। নিয়মিত কাজ করলে যেকোন উপায়েই আপনি আয় করতে পারবেন। কিংবা আপনি নিজেও আরও আরও উপায় খুজে পাবেন আয় করার।
কিভাবে এই আয় বাড়াবেন
ভিডিওটির বর্ণনা দেয়াঃ নতুন ভিডিও আপলোড করার পর সাথে সাথে ভিডিওটি সম্পর্কে তার নিচে বর্ণনা দিয়ে দেবেন। তাহলে YouTube সহজে আপনার ভিডিওটি সম্পর্কে ধারনা পেয়ে যাবে। এতেকরে YouTube নির্ধারিত টপিক অনুযায়ী ভিজিটদের কাছে ভিডিওটি পৌছে দেবে।
নিয়মিত ভিডিও তৈরীঃ নিয়মিত নিত্য নতুন ভালমানের ভিডিও আপলোড করার চেষ্টা করবেন। তাহলে আপনার Channel টির Viewer বাড়তে থাকবে। আর Viewer বাড়া মানেই হচ্ছে আপনার আয় বেড়ে যাওয়া।
ভিডিও শেয়ার করাঃ ভিডিও পাবলিশ করার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন-ফেইসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি সাইটগুলিতে আপনার ভিডিও শেয়ার করতে পারেন।
ব্যাক লিংক তৈরীঃ আপনি যে বিষয় নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বা ভিডিও তৈরী করছেন এরকম অন্য জনপ্রিয় সাইটগুলিতে আপনার ভিডিওটির লিংক দিয়ে দিতে পারেন। এতে করে সেখান থেকেও আপনার সাইটে প্রচুর ভিজিটর পেয়ে যাবেন।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম
YouTube এ Channel খুলতে হলে সব থেকে আগে আপনাকে এখানে সাইন ইন (Sign in) করতে হবে। আপনার Gmail ID আর একটা password দিয়ে সাইন ইন করুন। সাইন ইন করার পর নীচের ছবিটির মতো যদি স্ক্রীন আপনার সামনে আসে তাহলে লাল দাগ দেয়া অংশটিতে (My Channel) ক্লিক করুন। আর না হলে সরাসরি পরের ধাপে চলে যান।
এবার আপনার সামনে যে স্ক্রীনটি আসবে তার ডান দিকের কোণায় Profile Picture অপশনে একটি ক্লিক করুন। তারপর YouTube Settings অপশনে ক্লিক করুন (ছবির মতো)।
এবার নতুন এই স্ক্রীনটির একেবারে নীচে দেখুন Create a new Channel নামের যে অপশনটি আছে তাতে একটি ক্লিক করুন।
বক্সে আপনার চ্যানেলের নাম দিন। Category তে বাছাই করুন কোন ধরণের চ্যানেল আপনি খুলতে চান। এবার “I agree to Page Term” লেখায় টিক দিয়ে Done প্রেস করুন।
আপনার চ্যানেল তৈরি হয়ে গেছে। এবার আপনাকে Suitable Thumbnail image, Cover ইত্যাদি আর ছোট খাট যা যা দরকার সেগুলো সব ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী করে নিতে হবে। আশা করি নিজের থেকে এই কাজগুলো করতে পারবেন। সব শেষ হয়ে গেলে এবার আপনার ভিডিও Upload করা শুরু করে দিন।
Video Upload করতে হলে প্রথমে Video ট্যাবটি প্রেস করুন। তারপর Upload a Video লেখাটাতে ক্লিক করুন। ব্যস তারপর পছন্দ মতো ভিডিও সিলেক্ট করে আপলোড করে দিন আপনার সদ্য নির্মিত YouTube চ্যানেলে।
ইউটিউব মার্কেটিং কি?
আমরা সবাই জানি ইউটিউব হচ্ছে একটা ভিডিও শেয়ারিং সাইট এবং পৃথিবীর সকল ভিডিও শেয়ার সাইটের মধ্যে ইউটিউব সবথেকে জনপ্রিয় এবং ইউজার বান্ধব। সুতরাং বুজতেই পারছেন ইউটিউবে দৈনিক কি পরিমান ভিজিটর পাওয়া যায়। এদের কাছে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড এবং শেয়ারের মাধ্যমে কোন পণ্যের বা সেবার পরিচিতি পৌঁচে দেওয়াই হচ্ছে ইউটিউব মার্কেটিং। এক কথায়, ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে কোন পণ্য বা সেবা’র মার্কেটিং করাকেই ইউটিউব মার্কেটিং বলে।
ইউটিউব মার্কেটিং কেন করবেন?
অনলাইন মার্কেটিং করার অনেক উপায় আছে। তার মধ্যে ইউটিউব মার্কেটিং বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর এত জনপ্রিয়তার অনেকগুলো কারন আছে।
প্রথমত, ইউটিউব মার্কেটিং করলে খুব দ্রুত ট্রাফিক পাওয়া যায়। যেটা একটা ওয়েবসাইটের জন্য অনেক সময়ের ব্যাপার।আবার একটা সাইটের জন্য আপনি প্রথমেই হোস্টিং আর ডোমেইন এর জন্য টাকা খরচ করতে হবে যেটা নতুনদের জন্য অনিহার কারন। ইউটিউব এ আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না।
আর সবচেয়ে বড় যেই কারনে ইউটিউব মার্কেটিং ইদানিং বেশি জনপ্রিয় তা হচ্ছে এসইও রেঙ্কিং এর বিভিন্ন আপডেটের কারনে যারা রিভিও সাইট দিয়ে মার্কেটিং করে থাকেন তাদের রেঙ্কিং প্রতিনিয়ত ড্রপ করছে কিন্তু ইউটিউব এই প্রভাব থেকে মুক্ত।আবার, যারা এমন কোন প্রোডাক্ট ক্রয় করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন যেটার ডিজাইন বা ব্যাবহারবিধি নিয়ে তারা চিন্তিত তখন তারা সেই পণ্যটি দেখতে কেমন বা এটি কিভাবে ব্যবহার করবে তা জানার জন্য ইউটিউবে প্রবেশ করে আর তাই উন্নত বিশ্বে ইউটিউবে ঢু মারা মানুষের বড় অংশ এর পরেই কিছু না কিছু ক্রয় করে থাকেন। যার কারনে ইউটিউব হচ্ছে ক্রেতাদের ঘাটি।
১০ উপায়ে বাড়িয়ে নিন আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিউ এবং সাবস্ক্রাইব
- আপনার এবং আপনার চ্যানেলের পরিচিতি প্রদান করে একটা মনোমুগ্ধকর চ্যানেল ট্রেইলার তৈরি করুন যা কেউ আপনার চ্যানেলের হোমে আসলে অটো-প্লে হবে। আপনার ভিডিও নিসে আপনাকে অথোরিটি দিতে এটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
- ভিডিও এর শেষে একটা বড় এনোটেশনে শক্ত কল-টু-একশন প্রদান করুন।
- ট্রেন্ডিং ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করার পাশাপাশি কিছু ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করুন যেগুলো কখনো পুরনো হবে না। ট্রেন্ডিং ভিডিও দ্রুত কিছু কিছু ভিউ পাওয়ার জন্য কাজ করে, কিন্তু আপনার চ্যানেলকে স্মরণযোগ্যও রাখতে হবে। এতে আপনার চ্যানেলের আয় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন চান্স নেই। আর এটা গুগল রেঙ্কিংয়েও সহায়তা করে।
- আপনার ব্লগেও সাবস্ক্রাইভ বাটন দিন। সেটা এম্বেডেড ভিডিও এর পাশে হলে আরও ভালো হয়।
- কিছু ক্ষেত্রে মানুষ শুধুমাত্র লং-টেইল কীওয়ার্ড দিয়েই সার্চ করে থাকে। তাই এধরনের কিছু নিয়ে ভিডিও বানালে লং-টেইল ডেসক্রিপশন ব্যাবহার করবেন। এতে এমন কিছু ভিউ পাবেন যারা এই ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী।
- আপনার সাইটে বা ব্লগে একটা ইউটিউব উইজেড ব্যাবহার করতে পারেন। Tint এধরনের কাজের জন্য অনেক ভালো একটা টুল।
- আপনার ভিউয়ারদের লাইক করতে বলুন। কারন ভিডিওতে লাইক ইউটিউবকে ইনফর্ম করে যে আপনার ভিডিও পপুলার, তখন ইউটিউব সার্চ এ এটি প্রাধন্য পায়।
- আপনার ভিডিওতে দেওয়া কমেন্ট সবসময় চেক করুন এবং উত্তর দিন। এতে যেমন আপনার ভিউয়ার সাবস্ক্রাইবাররা বুজবে আপনি তাদের প্রতি আন্তরিক তেমনি ইউটিউব ও বুজবে যে আপনি আপনার ভিউয়ারদের প্রাধন্য দেন।
- অন্য ইউটিউবার এর সাথে কাজ করে দুজনেই দুজনের চ্যানেল প্রমোট করুন। আবার দুইজন একসাথে কিছু কো-ব্রেন্ডেড ভিডিও তৈরি করুন।
- Creator Dashbaord এবং Analytics থেকে সবচেয়ে একটিভ ফানজ খুজে বের করুন এবং তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন। এবং তাদেরকে তাদের কমিনিটিতে ভিডিও শেয়ার করতে বলুন।
Common Question On Youtube Earning
প্রথম প্রশ্ন : কি করে ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলব?
উত্তর : খুব সহজ, একটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরী করুন। নিজের সঠিক নাম, বয়স এবং ফোন নম্বর দিয়ে। এই অ্যাকাউন্ট দিয়ে ইউটিউবে লগ ইন করুন। সেখানে ‘Create Channel’ পাবেন। তার মাধ্যমে নিজের চ্যানেল তৈরী করুন। একটা ভালো প্রোফাইল পিকচার এবং কভার ফটো অ্যাড করুন। এবং আপনার নিজের ক্যামেরায় তৈরী যে কোনো ফুটেজ আপলোড করুন। ব্যস, আপনার ৫০ শতাংশ কাজ রেডি।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : আমি ভিডিও আপলোড করেছি কিন্তু টাকা আসছে না।
উত্তর : টাকা উপার্জন করতে হলে আপনাকে আপনার ভিডিওটি ‘Monetized’ করতে হবে। ইউটিউবের Video Manager-এ ক্লিক করুন, বা-দিকে একটা লিস্ট আসবে সেখানে Channel-e ক্লিক করুন, সেখানে আপনি Monetization পাবেন। এখান থেকে আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টটি অ্যাকটিভ করতে হবে। (অ্যাকটিভ করার উপায়টি লিখে সঠিক বোঝানো সম্ভব নয়, নিজে থেকে চেষ্টা করুন এবং স্টেপগুলি ফলো করুন)।
তৃতীয় প্রশ্ন : আমি কি যেকোনো ভিডিও আপলোড করতে পারি?
উত্তর : আপনি আপলোড করতে পারবেন সব ভিডিও কিন্তু সব ভিডিও থেকে পয়সা উপার্জন করতে পারবেন না। আপনি অন্য কোনো সিনেমা বা টিভির থেকে নেওয়া ভিডিও বা অডিও , এমনকি আপনার ভিডিওর মধ্যেও যদি অন্য কারো ভিডিও বা অডিও থাকে তাহলে সেটাও মনেটাইজ হবে না, ইচ্ছে করলে ইউটিউব আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে ব্লক করে দিতে পারে এবং আর আপনি কখনই আপনার নিজের নামে ভবিষ্যতে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।
চতুর্থ প্রশ্ন : পাড়ার ফাংশানে একজন গায়ক গান গেয়েছে আমি তার ভিডিও নিয়েছি, সেটা কি আমি আপলোড করতে পারি?
উত্তর : এক্ষেত্রে ভিডিওটি আপনার নিজের কিন্তু যেহেতু অডিওটি অন্য কারো তাই আপনি সেটি থেকে উপার্জন করতে পারবেন না। জেনে রাখুন, অন্য কারো গান আপনি নিজে গেয়েছেন সেটাও কিন্তু ইউটিউব গ্রহণ করবে না।
ষষ্ঠ প্রশ্ন : কত টাকা উপার্জন সম্ভব?
উত্তর : এরও কোনো সঠিক উত্তর নেই। ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের মূল উৎস হচ্ছে ভিউ। যে ভিডিও যত বেশী ভিউ হবে সে ভিডিও তত বেশী অর্থ উপার্জন করবে। তবে মোটামুটি ভাবে প্রতি হাজার মনেটাইজ ভিউতে ১ থেকে ৫ ডলার অবধি আয় সম্ভব।
সপ্তম প্রশ্ন : মনেটাইজ ভিউ কি ?
উত্তর : ধরা যাক আপনার ভিডিওটে যে অ্যাড আসে, সেটা ১ মিনিট-এর মাথায়। এবার আপনার ভিডিওটি ৫০০০ ভিউ হয়েছে কিন্তু এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার জন হয়ত আপনার ভিডিও ১ মিনিটের কম দেখেছে। তাহলে ৫ হাজার ভিউ স্বত্তেও আপনার মনেটাইজ ভিউ হবে মাত্র ২ হাজার। মনেটাইজ ভিউ কত হয়েছে সেটা একমাত্র যার অ্যাকাউন্ট সেই দেখতে পারবে ‘Analytics’-এ ক্লিক করে।
অষ্টম প্রশ্ন : কবে থেকে টাকা আয় সম্ভব?
উত্তর : আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাপ্লিকেশান অ্যাপ্রুভড হতে দুই থেকে তিন দিন লাগে। একবার অ্যাপ্রুভড হয়ে গেলেই আপনার আয় শুরু।
নবম প্রশ্ন : টাকা কবে থেকে পাব?
উত্তর : আপনার ইনকাম লেভেল যতদিন না ১০০ ডলার হচ্ছে ততদিন আপনি টাকা পাবেন না। ১০০ ডলার হলে আপনার বাড়িতে গুগল থেকে একটি চিঠি আসবে তাতে একটি কোড নম্বর থাকবে সেই কোড নম্বর দিয়ে আপনাকে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেইলস দিতে হবে অর্থাৎ ব্যাঙ্ক নেম, অ্যাকাউন্ট হোল্ডার নেম, সুইফট কোড ইত্যাদি। আপনার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট-এ আপনার নাম এবং ঠিকানা আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টের নামের সাথে মিল থাকতে হবে, নইলে এই টাকা আপনি পাবেন না। তাই অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যেই নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে এবং সেখানে যে অ্যাড্রেস দেওয়া আছে সেটাই ব্যবহার করবেন।
দশম প্রশ্ন : কত তাড়াতাড়ি টাকা আসবে?
উত্তর : ইউটিউব মূলত একটা মাধ্যম যেখানে মানুষ নিজেদের ভিডিও শেয়ার করে। এই সাইটের প্রাথমিক লক্ষ টাকা উপার্জন নয়। তাই টাকা উপার্জন করব ভেবে যদি আপনি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন তাহলে আপনি নিরাশ হবেন। ইউটিউব থেকে টাকা পেতে আপনাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। হতে পারে আপনার প্রথম টাকা পেতে পেতে এক বছর বা তার-ও বেশি লেগে গেল কিন্তু একবার টাকা আসা শুরু করলে এবং আপনার ভিডিও প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার ভিউ দিতে পারলে বিশ্বাস করুন আপনাকে আর কোনো চাকরী করতে হবে না।
শেষ প্রশ্ন : সকলেই কি টাকা আয় করতে পারে?
উত্তর : আঠারো বছরের যে কেউ তার নিজের মৌলিক ভিডিও দিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারে। কিন্তু কার ভিডিও কত জনপ্রিয় হবে সেটা নির্ভর করছে কিছুটা আপনার দক্ষতা এবং আপনার ভাগ্যের উপর। প্রচুর মানুষ যারা নিজের পোষা বিড়ালের ছবি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা আয় করছে আবার অনেকে আছে যারা পয়সা খরচ করে নিজেরা নানা রকম ভিডিও বানিয়েও এক ডলার আয় করতে পারছে না। তাই সঠিক ভাবে যদি আপনি আপনার ইউটিউব অ্যাকাউন্টটি পরিচালনা করতে পারেন তাহলে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা অসম্ভব নয়।
শেষ কথা
যেহেতু YouTube হচ্ছে Google কোম্পানির একটি অংশ, সুতরাং আপনি চাইলে এখান থেকে আপনার পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে টাকা উপার্জন করতে পারেন। এর সব চাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনাকে কোন প্রকার Domain ও Hosting কোনটাই কিনতে হচ্ছে না। তাছাড়া YouTube এর মাধ্যমে খুব সহজেই Google AdSense অনুমোদন পাওয়া যায়। কাজেই আমার মনেহয় এটিই হচ্ছে অনলাইন থেকে টাকা আয় করার সবচেয়ে সহজ, ফ্রি এবং বিশ্বস্ত একটি উপায়।
© SPediaXp
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করুন
Reviewed by SGMoviesHD
on
September 22, 2018
Rating:

No comments: