সিক্যুয়েল নিয়ে সর্বজনীন আক্ষেপ! নাম রয়েছে, কিন্তু পুরনো গল্পের ঝাঁঝ কি 'মিসিং'? অনেক সময় ভালো মালা তৈরির জন্য শুধু ভালো ফুল থাকলেই হয় না, প্রয়োজন হয় একটা শক্ত দড়ির। 'ষড়রিপু ২ জতুগৃহ'- ছবির 'ভিলেন' হিসেবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে টেক্কা দিয়ে গেল অগোছালো প্রেক্ষাপট। পাঁচ বছর পর ফের পর্দায় চন্দ্রকান্ত সেন। এবারেও এক খুনের রহস্য থেকে পর্দা সরানোর জন্য। গল্পের জাল বোনা হয়েছে দেবরাজ সেন নামক এক আত্মকেন্দ্রীক সংগীত পরিচালকের জীবনকে কেন্দ্র করে। দেবরাজের ভূমিকায় পর্দায় দেখা গিয়েছে শাশ্বতকে। কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ- মাৎসর্য্য ষড়রিপুর ঝলক রয়েছে দেবরাজের জীবনে। ধনকুবের প্রথম স্ত্রীর রহস্যমৃত্যুর পর দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন দেবরাজ, তাঁদের জীবনে আসে একটি কন্যা সন্তানও। কিন্তু, হঠাৎ ছন্দপতন। মৃত্যু হয় দ্বিতীয় স্ত্রীরও। এরপরই দেবরাজ সেনের জীবনে প্রবেশ মেঘার। 'কাকাবাবু' ডাকা মেঘাকেই বিয়ে করে বসেন দেবরাজ! মেঘাকে আশ্রয় করেই বড় হতে থাকে দেবরাজের মেয়ে। এদিকে মেয়ের সঙ্গে পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়া মেঘা ফের মুখোমুখি হয় পুরনো প্রেমিক ডাক্তার ঋজু চট্টোপাধ্যায়ের। মেঘার কাছেই তাঁর মন এখনও আটকে রয়েছে, দাবি করে বসেন পুরনো প্রেমিক। এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই এরপর হঠাৎ একটি খুন। গল্পে প্রবেশ গোয়েন্দা চন্দ্রকান্ত সেনের। কাকাবাবুকে হঠাৎ স্বামী হিসেবে কেন মেনে নিলেন মেঘা? খুনের নেপথ্যে কে? গল্পের প্লট টানটান রাখতে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দর্শকদের ভাবনা আর আগ্রহের সঙ্গে খেলতে চেয়েছিলেন পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী। কিন্তু, মাঝে মধ্যেই খেই হারিয়েছে গল্প। ২ ঘণ্টা ৯ মিনিটের ছবির প্রথম ভাগটি অত্যন্ত 'ধীরগতির', ফলে গল্পের সঙ্গে দর্শকদের একাত্ম হতে বিস্তর বেগ পেতে হয়। ভাবনার এ গলি ও গলি হয়ে রহস্য উন্মোচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েও শিরদাঁড়ায় স্রোত বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা কম। কিন্তু, এই 'লাস্ট মোমেন্ট টুইস্ট' ছিল ষড়রিপু ছবির ইউ এস পি। এখানে কী হয় কী হয়ের বদলে প্রেডিক্টেবল প্লট দর্শকদের চোখ টাটিয়ে দিতে অক্ষম। ফলে ক্রাইম থ্রিলারের টানটানভাবটাই মিসিং। ফেরা যাক অভিনয়ে। মুখ্য চরিত্র অর্থাৎ চন্দ্রকান্ত সেনের ভূমিকায় চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর অভিনয় বেশ ভালো। কিন্তু, সিক্যুয়েলে চন্দ্রকান্ত সেন হঠাৎ করেই ধোপধুরস্ত। চরিত্রের ডার্ক সাইডগুলিকে সযন্তে ধুয়ে-মুছে ফেলেছেন পরিচালক। এই সিনে গোয়েন্দার মুখে 'পারফেক্ট ক্রাইম' সংলাপ শুনে দর্শকরা অবাক হতে পারেন। তবে চিরঞ্জিৎ অভিনয়ের মধ্যে চন্দ্রকান্তের ঝাঁঝ, জেদ, রহস্য উন্মোচনের জন্য একগুয়েমি ভাব ধরে রেখেছেন। ছবিতে মেঘার ভূমিকায় দেখা গিয়েছে অরুণিমা ঘোষকে। পর্দায় অত্যন্ত সুন্দরী অরুণিমা। কিন্তু, শাশ্বত, চিরঞ্জিতের কাছে ম্লান তিনি। কয়েক মিনিটের জন্য পর্দায় এসেও জাত চিনিয়ে গিয়েছেন রাজেশ শর্মা। ছবিটিকে ধরে রেখেছেন শাশ্বত। নেগেটিভ চরিত্র যে কখন হিরো হয়ে যাবে- ধরতেও পারবেন না। প্রতিটি দৃশ্যে শাশ্বত বড্ড 'পারফেক্ট'। পরিচালকের কাছে অনুযোগ, দেবরাজ সেনের বয়স বাড়ানোর জন্য সাদা ঝুলপির সংযোজন কি খুব আবশ্যক ছিল! আসলে বিষয়টি অত্যন্ত মেকি লাগছিল, যা শাশ্বতর 'রিয়েলিস্টিক' অভিনয় থেকে চোখ সরিয়ে দিচ্ছিল বারবার। তবে ছবির লোকেশন চোখ জুড়িয়ে দেয়। সিনেমাটোগ্রাফার সৌভিক বসুর চোখকে কুর্ণিশ। পাহাড়ে বেশ কিছু ড্রোন শট দর্শকদের নজর কাড়তে বাধ্য। রূপম ইসলামের সুরে গানগুলি মন ছুঁয়ে যায়। পরিচালকের প্রচেষ্টাও সৎ। পুজোর সময় রহস্য-রোমাঞ্চে মোড়া কোনও ছবি দেখতে চাইলে সিনেমা হলে গিয়ে দেখেই আসতে পারেন 'ষড়রিপু ২ জতুগৃহ'।
from Movie Review in Bengali, চলচ্চিত্র পরিদর্শন, Bangla Movie Review, Bollywood Film Rating https://ift.tt/3iP72XN
ষড়রিপু ২ জতুগৃহ
Reviewed by SGMoviesHD
on
October 11, 2021
Rating:

No comments: