এই সময় ডিজিটাল ডেস্ক: 'টাইগার্স ডোন্ট নিড টু রোর।' শেরনির ক্ষেত্রেও কিন্তু এই আপ্তবাক্যটি প্রযোজ্য। গর্জন না করেও যে নিজের প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব, তা-ই প্রমাণ করে দিলেন পরিচালক অমিত মাসুরকার। ছবিতে বিদ্যা বালনকে দেখা গিয়েছে বিদ্যা ভিনসেন্টের ভূমিকায়। একনিষ্ঠ ফরেস্ট অফিসারের ভূমিকায় তিনি যেন অনবদ্য। ছবির চিত্রনাট্য অনুযায়ী, বিগত ন' বছর ধরে প্রমোশন পাননি বিদ্যা। অথচ কাজের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে তিনি। ছ' বছর ধরে ডেস্কে কাজ করার পর অবশেষে সুযোগ এল। বিজাসপুরের জঙ্গলে কাজের সুযোগ এল বটে। সঙ্গে এল হাজারো চ্যালেঞ্জ। একসময় কিংকর্ত্যবিমূঢ় হয়ে নিজের স্বামী পবনকে (মুকুল চড্ডা) ভিডিয়ো কল করে সে। জানায়, দমবন্ধকর পরিস্থিতির কথা। এমনকী সে চাকরি ছেড়ে দিতে চায়, এ কথাও জানায় স্বামীকে। তবে পবন তাকে চাকরি ছাড়তে বারণ করে। আসলে তার মুম্বইয়ের চাকরি কদিন থাকবে, বা আদৌ থাকবে কিনা তা নিয়েই যে ধন্দ রয়েছে! সবদিক থেকেই বিদ্যার জীবন আঁধারময় হয়ে আসে। তাঁর দফতরের বেশিরভাগ কর্মীই পুরুষ। মহিলা বলে তাঁর মতের যেন কোনও মূল্যই নেই। তাঁর কর্মজগৎ যেন পুরুষশাসিত সমাজের প্রতিচ্ছবি। তবে এই বিষয়টি আসল সমস্যার কাছে বড্ড ছোট। আসল সমস্যার সূত্রপাত হয় তখন, যখন একটি মানুষখেকো বাঘিনী লোকালয়ে হানা দিতে আরম্ভ করে। তার উপদ্রবে তটস্থ হয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা। বিদ্যার একটাই লক্ষ্য, বাঘটিকে জীবিত অবস্থায় পাকড়াও করা। তার বস বনসাল (ব্রিজেন্দ্র কালরা) চান, টি১২ নামে চিহ্নিত ওই বাঘিনীর উপদ্রবের সমস্যা যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যা মিটিয়ে ফেলুক। এদিকে রঞ্জন রাঝন (শরত সাক্সেনা) নামের রাজনীতিকের চাপ। সবমিলিয়ে বিদ্যার জীবন সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র স্থানীয় কলেজের প্রাণীবিজ্ঞানের অধ্যাপক হাসান নূরানি (বিজয় রাজ), স্থানীয় বাসিন্দা জ্যোতি (শম্পা মণ্ডল) এবং বন দফতরের প্রধান মিস্টার নাঙ্গিয়া (নী রজ কবি) তাঁর পাশে দাঁড়ান। বন্যপ্রাণ বনাম মানুষের অলিখিত লড়াই যে আজও চলছে, এই বিষয়টিই সুন্দরভাবে দেখিয়েছেন পরিচালক অমিত মাসুরকর। চিত্রনাট্যের বুনোঠ যেমন পোক্ত, তেমনই সুন্দর দৃশ্যায়ন। আস্থা টিকুর স্ক্রিন প্লে দুর্দান্ত। শুধুমাত্র মূল চরিত্রের উপরেই ফোকাস রাখা হয়েছে, তা নয়। বরং জঙ্গলের আশেপাশে থাকা গ্রামবাসীর দুঃখ-দুর্দশার বিষয়টিও দেখানো হয়েছে দুর্দান্তভাবে। রাকেশ হরিদাসের ক্যামেরা এবং অনীশ জনের সাউন্ড ডিজাইন দুরন্ত। গহন, সবুজ অরণ্যের প্রেমে পড়তে বাধ্য হবেন। সূর্যের নরম আলো, কুলকুল করে বয়ে চলা নদী, পতঙ্গের উড়ে বেড়ানোর শব্দ, পাতার খসখস আওয়াজ, পাখির ডাক, সবকিছুই যেন ছবিতে দুর্দান্ত। প্রকৃতির অমোঘ হাতছানিতে দর্শক আকৃষ্ট হতে বাধ্য। যখন বিদ্যার সহচর তাঁকে বলবে, আপনি জঙ্গলে একশো বার যেতে পারেন, একবার হয়ত বাঘের দেখা মিলবে। বাঘ কিন্তু আপনাকে ৯৯ বার দেখে নিয়েছে। ডায়ালগটি শোনামাত্র শিরদাঁড়ায় শিহরণ জাগবে। পরিচালক একটি মাত্র সংলাপে বুঝিয়ে দিয়েছেন, জঙ্গলে বহিরাগত ঠিক কে। রহস্যের জাল ঘনীভূত করেছে ছবির ব্যকগ্রাউন্ড স্কোর। তৈরি করেছেন বেনেডিক্ট টেলর এবং নরেন ছন্দাভারকার। বন্দিশ প্রজেক্টের তৈরি করা গানটিও পারফেক্ট কায়দায় ব্যবহার করা হয়েছে। আবারও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে মুগ্ধ করেছেন দর্শককে। বিদ্যা ভিনসেন্টের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি সঠিক কায়দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অভিনেত্রী। বন দফতরের আধিকারিকের জেদ, মনোবল, সাহস, একনিষ্ঠতা সবটাই ফুটিয়ে তুলেছেন অসামান্য দক্ষতায়। পুরুষতন্ত্রের সঙ্গে লড়াইয়ে শুধু কর্মক্ষেত্রে জিতেছেন তা নয়, বরং বাড়িতেও জয় পেয়েছেন ভিনসেন্ট। সমতা আনার লড়াইয়ে বিদ্যার জয় দেখে ভালো লাগবে অনেকেরই। বিজয় রাজ, ব্রিজেন্দ্র কালরা, নীরজ কবি, শম্পা মণ্ডল, শরত সাক্সেনার অভিনয়ও স্বতঃস্ফূর্ত। সত্যকাম আনন্দও নজর কেড়েছেন। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখা কতটা জরুরি, তা সহজেই বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। পাশাপাশি স্যাটায়ারও ব্যবহার করেন প্রয়োজনমাফিক। পাশাপাশি নিসর্গের চিত্রও দেখিয়েছেন। লকডাউনের বন্দিদশায় শেরনি ছবি দেখাটা কিন্তু মাস্ট! তবে যাঁরা জাঁকজমকপূর্ণ বলিউড মুভি দেখতে পছন্দ করেন, তাঁদের মনে ছবিটি হয়ত বিশেষ দাগ কাটবে না। তবে এই ছবির সারল্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর আসল মজা, আসল সৌন্দর্য।
from Movie Review in Bengali, চলচ্চিত্র পরিদর্শন, Bangla Movie Review, Bollywood Film Rating https://ift.tt/2UakdZG
শেরনি
Reviewed by SGMoviesHD
on
June 19, 2021
Rating:

No comments: